সিলেট বিভাগের ঐতিহ্য, তথ্য-উপাত্ত, প্রাচীন স্থাপত্য ও ঐতিহাসিক পটভূমি সমৃদ্ধ হবিগঞ্জ জেলা। ৫১৩ বছরের প্রাচীনকালের সাক্ষী “শংকরপাশা শাহী জামে মসজিদ”।
সদর উপজেলার রাজিউড়া ইউনিয়নের শংকরপাশা গ্রামে অবস্থিত উচাইল শংকরপাশা শাহী জামে মসজিদ। পঞ্চদশ শতাব্দীতে নির্মিত প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন এ প্রাচীন মসজিদটি।
এ মসজিদ গাত্রে উৎকীর্ণ শিলালিপি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, তৎকালীন সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মজলিশ আমিন, ১৫১৩ সালে এ মসজিদটির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করেন। এ মসজিদের পাশেই তার সমাধির দেখা পাওয়া যায়। কালের বিবর্তনে এক সময় মসজিদসহ সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকা ঘণঅরণ্য ভূমিতে পরিণত হয়। পরবর্তীকালে অনাবাদি জঙ্গলবেষ্টিত এ এলাকায় জনবসতি গড়ে উঠার প্রাক্কালে আবারও জনসন্মুখে আসে এ মসজিদটি।
সরজমিনে দেখা যায়, এ মসজিদ ভবনটি একটি একচালা বিশিষ্ট প্রাচীন পাকা ভবন, যার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ একই পরিমাপের। এর দৈর্ঘ্য সাড়ে ২১ ফুট আবার প্রস্থও ২১ ফুট ৬ ইঞ্চি। এর সম্মুখের বারান্দাটির প্রস্থ তিন ফুটের একটু বেশি এবং এতে চারটি গম্বুজ রয়েছে। এটির মূল ভবনের মধ্যভাগে একটি বিশাল আকৃতির গম্বুজ এবং বারান্দার উপর রয়েছে তিনটি ছোট গম্বুজ। মসজিদটিতে মোট ১৫টি দরজা ও জানালা রয়েছে যা পরস্পর একই আকৃতির ও সামঞ্জস্য পূর্ণ।
উত্তর পূর্ব ও দক্ষিণ, এই তিন দিকের দেয়ালের পুরুত্ব প্রায় পাঁচ ফুট এবং পশ্চিমের দেয়ালটি প্রায় দশ ফুট। এতে মোট ছয়টি পুরাকীর্তি কারুকার্য শোভিত স্তম্ভ রয়েছে, যা প্রধান কক্ষের চারকোণে ও বারান্দার দুই কোণে অবস্থিত। উপরের ছাদ আর প্রধান প্রাচীরের কার্নিশ ধনুক আকৃতির বাঁকানোভাবে নির্মিত। মসজিদের দক্ষিণ পার্শ্বে একটি বড় দীঘি রয়েছে।
মধ্যযুগীয় স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম নিদর্শন হবিগঞ্জের এই শংকরপাশা শাহী মসজিদ। মসজিদটি সুলতানি আমলের স্থাপত্য নিদর্শনের চিহ্ন বহন করে। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার অন্তর্গত উচাইল নামক গ্রামে ছেট্ট একটি টিলার উপর প্রায় ৬ একর ভূমির ওপর কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে মসজিদটি।
জানা যায়, অত্যন্ত চমৎকার ও মনোমুগ্ধকর কারুকাজ সমৃদ্ধ মসজিদটির দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলী দেখার মতো। পোড়া মাটির তৈরি নান্দনিক কারুকার্য ও অসাধারণ নির্মাণশৈলী আধুনিকতাকে হার মানায়। এ সমস্থ পোড়া মাটির নক্সা কাটা অসংখ্য ফলক এ ইমারতের দেয়ালে সাঁটানো হয়েছে। দেয়ালের বহিরাংশে পোড়া মাটির বিভিন্ন নকশা এবং অলঙ্করণ সহজেই দর্শনার্থীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
পোড়া মাটির নক্সা আঁকা মসজিদটি দৃশ্যত লাল বা রক্তিম বর্ণের হওয়ায় লোকজন এটিকে ‘লাল মসজিদ’ বলে থাকেন। আবার এটির অবস্থান একটি টিলাশৃঙ্গে। এ দুই বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণে মসজিদটিকে ‘লালটিলা মসজিদ’ও বলা হয়। এ মসজিদটি পুনঃআবির্ভূত হওয়ায় অনেকেই এটিকে গায়েবি মসজিদও বলে থাকেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, প্রাচীন এ মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণের সব দায়িত্ব এখন সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের হাতে রয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত দৃশ্যত কোন প্রকার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।